ইয়োগা বা যোগব্যায়াম
ইয়োগা শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে। বাংলায় একে বলা হয় ‘যোগ’। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকে দেহ ও মনকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য এই ইয়োগা চলে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও ইয়োগা ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে শরীর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে এবং তাই সুস্থ থাকতে মানুষ ইয়োগা এর ব্যাপারে মনোযোগী হচ্ছে।
কারণ, প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর ও সুস্থ থাকতে ইয়োগার বিকল্প নেই।
যোগ অর্থ সংযোগ। ইয়োগা বা যোগব্যায়ামে মূলতঃ দেহ ও মনের সংযোগ ঘটানো হয়ে থাকে। এটি নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের একটি সঠিক ও কার্যকরী পদ্ধতি। একে মোট চার ভাগে বিভক্ত করা যায়ঃ
১)জ্ঞান যোগ, ২)ভক্তি যোগ, ৩)রাজ যোগ ও ৪)কর্ম যোগ
ইয়োগার উপকারিতা
মানসিক চাপ কমায়
মানসিক চাপ কমানো, স্ট্রেস কমানো, মানসিক সমস্যা কমানো এসকল ক্ষেত্রে ইয়োগা বা যোগব্যায়ামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
দেহকে শক্তিশালী করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন, তারা অন্যদের তুলনায় বেশ শক্তিশালী। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, পেশিকে দৃঢ় ও মজবুত করে, হাত-পা এর পেশীকে সুগঠিত করে তোলে যোগব্যায়াম।
ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
ইয়োগা বা যোগব্যায়াম পিঠ, ঘাড়, কোমর, হাঁটু ইত্যাদি অঙ্গের ব্যথা দূর করতে অতুলনীয় ভূমিকা রাখে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
ইয়োগা বা যোগব্যায়ামে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বিশেষ করে ‘সান সল্যুশন’ ও ‘ডাউনওয়ার্ড ডগ’ চর্চা মস্তিষ্কে কার্যকারিতার উন্নতি ঘটায়।
অনিদ্রা দূর করে ইয়োগা
যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে বা ঘুম আসতে দেরি হয় তারা ইয়োগার সাহায্য নিতে পারেন।বিশেষ কিছু ইয়োগা চর্চায় রাতের ঘুম হবে বেশ গভীর ও আরামদায়ক।
মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে ইয়োগা
মাইগ্রেনের প্রচন্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ইয়োগা খুবই কার্যকর। নিয়মিত ইয়োগা করলে ওষুধ ছাড়াই মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
মনকে প্রফুল্ল ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে ইয়োগা
যারা সুখে থাকতে চান, সবসময় হাসি-খুশি থাকতে চান, তারা নিয়মিত ইয়োগা করতে পারেন। ইয়োগা সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
ইয়োগা করতে চাইলে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত
- ইয়োগা করতে চাইলে প্রথমেই সকল চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে শান্ত হয়ে একটি নির্জন জায়গায় বসতে হবে যাতে কোন শব্দ না আসে। এজন্য ইয়োগা করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ভোরবেলা। নির্জন ও বাতাস নির্বিঘ্নে চলাচল করে এমন একটি স্থানই ইয়োগা করার জন্য ভালো।
- খাবার খাওয়ার ৩ ঘন্টা পর ইয়োগা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ভরা পেটে ইয়োগা করা একদম ঠিক নয়।
- নাক বন্ধ থাকলে ইয়োগা করা উচিত নয়, কারণ ইয়োগার সময় অবশ্যই নাক দিয়েই নিঃশ্বাস নিতে হয়।
- অসুস্থ অবস্থায় ইয়োগা করতে নেই।
- গোসলের আগে ইয়োগা করে নেওয়াই ভালো।
- ইয়োগা সারাদিনে একবার করলেই যথেষ্ট।
ইয়োগা করতে চাই ইয়োগার জন্য তৈরি ইয়োগা ম্যাট
দিনের শুরুতে কিছুক্ষণ ইয়োগা করে নিতে পারলে আপনার দিনটি হবে সুন্দর ও প্রাণবন্ত। যারা ঘরে বসেই ইয়োগা করতে চান, তারা চাইলেই আজকেরডিল ডট কম থেকে অনলাইনে কিনে নিতে পারেন একটি উপযুক্ত ইয়োগা ম্যাট। ঘরে ব্যায়াম করতে চাইলে এই ম্যাটটি ভীষণ কাজে দিবে। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টির দিনে আপনি চাইলে ঘরে ইয়োগা ম্যাটে বসেই ইয়োগা করে নিতে পারবেন।
ইয়োগা ম্যাট কিনতে চাইলে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে
ইয়োগা ম্যাট কিনতে চাইলে কিছু বিষয়ের প্রতি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। সেগুলো হলোঃ
- মসৃণ ইয়োগা ম্যাট ব্যবহার করতে চাইলে পিভিসি ম্যাটেরিয়ালের ইয়োগা ম্যাট কেনা যেতে পারে। তবে অনেকে এই ধরনের ম্যাটে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। কারণ, পিভিসি ম্যাটগুলো ঘেমে গিয়ে পিছলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নন-স্লিপ সারফেসের তৈরি ম্যাট কেনা ভালো।
- ইয়োগা ম্যাটটি কতোটুকু আরামদায়ক, তা নির্ভর করে ম্যাটের ম্যাটেরিয়াল ও পুরুত্বের উপর। কেনার সময় তাই ম্যাটেরিয়াল ও পুরুত্ব দেখে কেনা উচিত।
- ম্যাটটিতে যেন ঘাম লেগে তা আঠালো না হয়ে যায়, সেজন্য ম্যাটের ম্যাটেরিয়াল বুঝে তারপর ম্যাট কিনতে হবে। এক্ষেত্রে কটন ম্যাট, বেসিক ইয়োগা ম্যাট, প্লাস্টিক ইলাস্টোমার ম্যাট, ন্যাচারাল রাবার ইয়োগা ম্যাট, কিংবা পাটের ইয়োগা ম্যাট আরামদায়ক ইয়োগার জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে।
ইয়োগা ম্যাট ব্যবহারের কিছু নিয়ম
ম্যাটের দুই পাশই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করা:
ইয়োগা ম্যাটের শুধুমাত্র এক পাশ ব্যবহার করলে সেই পাশটি তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে, আর অপর দিক নতুনই থেকে যাবে। এতে ম্যাটটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে না। তাই ম্যাটটির দুপাশই নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।
হালকা আলো-বাতাসের সংস্পর্শে আসা:
ইয়োগার সময় শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে, যার বেশিরভাগই ইয়োগা ম্যাট শুষে নেয়। তাই ইয়োগা করা শেষে এই ঘামে ভেজা ম্যাটটি গুছিয়ে রেখে দিলে তাতে ছত্রাক জন্মাতে পারে, কিংবা তা দ্রুত ছিঁড়ে যেতে পারে। এই ম্যাটটি পরে ব্যবহারের সময় ত্বকে ব্রণ, র্যাশ কিংবা জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই ইয়োগা শেষ করে ম্যাটটিকে মাঝে মাঝে রোদে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, বেশিক্ষণ রোদে রাখলে ম্যাট নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অল্প সময়ের জন্য রোদে দিয়ে আবার তুলে ফেলতে হবে।
ইয়োগা ম্যাটটি কখন পরিষ্কার করা উচিত
ইয়োগা করার হারের উপর নির্ভর করে যে কখন ম্যাটটি পরিষ্কার করতে হবে। সাধারণত সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট। তবে আপনার যদি ঘাম বেশি হয় ও দ্রুত ম্যাট ময়লা হয়ে যায়, তাহলে সপ্তাহে একাধিকবার পরিষ্কার করতে পারেন।
ইয়োগা ম্যাট পরিষ্কার করার পদ্ধতি
গরম পানি দুই কাপ ও সামান্য পরিমাণ ডিশ ওয়াশিং লিকুইড একটি স্প্রে বোতলে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তা ম্যাটের উপর স্প্রে করে একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছে নিতে হবে। এভাবে ম্যাটের দুই পাশই পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর শুকনো একটি কাপড় দিয়ে আরেকবার মুছে নিতে হবে। সবশেষে একে বাতাসে শুকিয়ে নিয়ে মুড়িয়ে শুষ্ক স্থানে রেখে দিতে হবে।
নিচে কয়েকটি ইয়োগা ম্যাটের বিবরণ দেওয়া হলো
ইয়োগা ম্যাট
সাইজঃ দৈর্ঘ্য ৭২”/ ১৮২ সে.মি. ও প্রস্থ ২৪” /৬০ সে.মি.।
ম্যাটটি পিভিসি দিয়ে তৈরি। এটি সহজে বহনযোগ্য ও খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এর সাথে একটি আরামদায়ক কুশন আছে যা একে পিছলে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। এই ম্যাটে ইয়োগা, পিলেটস এবং অন্যান্য ব্যায়াম আরামে করা যায়।
ইয়োগা এক্সারসাইজ ম্যাট-৬ মি মি
কোন শক্ত স্থানের উপর ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে পিছলে যাওয়া রোধে নন-স্লিপ বোতাম। সাইজঃ দৈর্ঘ্য ৬১”/ ১৭৩ সে.মি. ও প্রস্থ ২৪” /৬৮ সে.মি.। এটিকে সহজেই গুটিয়ে নিয়ে যেকোন যায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। এটি পিভিসি ফোম দিয়ে তৈরি।
ইয়োগা ম্যাট কিনুন সহজে, ঘরে বসে অনলাইনেই!
খেলার সরঞ্জাম পাওয়া যায়, ইয়োগা ও এক্সসারসাইজ ম্যাট এমন দোকানেই সাধারণত পাওয়া যায়। এছাড়াও তেজগাঁও-গুলশান লিঙ্ক রোড, বসুন্ধরা সিটি, ও কলাবাগানে বেশ কিছু দোকানে ইয়োগা ম্যাট রয়েছে। এছাড়া বাসায় বসে কিনতে পারেন অনলাইন মার্কেট প্লেস থেকেও। আজকের ডিল ডটকমে পেয়ে যাবেন ইয়োগা ম্যাট। ৫৫০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের ইয়োগা ম্যাটটি।